সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

স্ত্রীধন | Stridhana

 স্ত্রীধন

প্রাচীন ভারতীয় ধর্মশাস্ত্রে পিতার সম্পত্তির উপর কন্যার স্বভাবিক উত্তরাধিকার স্বীকৃত নয়। তবে মনুস্মৃতিতে বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যাক্তি পুত্রহীন হয় এবং সে যদি তার কন্যাকে ‘পুত্রিকা’ হিসাবে গ্রহণ করে তখনই কন্যা পিতার সম্পত্তির উপর উত্তরাধিকার পাবে। সাধারণ ভাবে নারী উপহারস্বরূপ যে ধন লাভ করে সেই ধনের পুরপুরি মালিক সে। এই সম্পত্তি স্ত্রীধন নামে পরিচিত। স্ত্রীধন সাধারণত অস্থাবর সম্পত্তি, যা তারা পিতা, মাতা, বন্ধু ও আত্মিয়-স্বজনের কাছ থেকে পেয়ে থাকেন এবং তার মৃত্যুর পর সেই সম্পত্তির উপর তার মেয়েদের অধিকার বর্তায়। যাজ্ঞবল্ক্যের মতে স্ত্রীধনের উপর স্বামী মাত্র কয়েকটি ক্ষেত্র, যেমনঃ দুর্ভিক্ষাবস্থা, বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রভৃতি ছাড়া কোন দাবী করতে পারে না।

মনুস্মৃতিতে ছয়প্রকার স্ত্রীধনের কথা বলা হয়েছেঃ-

১. অধ্যগ্নি, যা বিবাহকালে অগ্নির সম্মুখে প্রদত্ত হয়।
২. অধ্যবাহনিক, যা কন্যার পতিগৃহে যাওয়ার প্রাক্কালে প্রদত্ত হয়।
৩. প্রীতিদত্ত, যা স্বজন ও বন্ধুবর্গ প্রীতিসহকারে দিয়ে থাকে।
৪. ভ্রাতৃদত্ত, যা ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া। মনু বলেছেন, বিবাহের সময় ভগ্নীদের জন্য ভ্রাতারা তাদের প্রাপ্ত উত্তরাধিকের ১/৪ অংশ ত্যাগ করবে।
৫. মাতৃদত্ত এবং ৬. পিতৃদত্ত।

কৌটিল্য চার ধরনের স্ত্রীধনের কথা বলেছেনঃ

১. শুল্ক—পাত্রপক্ষ কন্যার জন্য অলঙ্কার ও অন্যান্য সামগ্রী সহ যে মূল্য ধরে দেয়;
২. অন্বাধেয়—বিবাহ পরবর্তী প্রাপ্তি;
৩. অধিবেদনিক—পতিগৃহে যাওয়ার সময় যা তাকে দেওয়া হয়;
এবং ৪. বন্ধুদত্ত।

স্ত্রীধন সম্পর্কে যাজ্ঞবল্ক্য মনুর বক্তব্যকে আরও প্রাঞ্জল ভাবে তুলে ধরেছেন। তিনিও ছয় প্রকার স্ত্রীধনের কথা বলেছেন। যেমনঃ ১. পিতা মাতা স্বামী ও ভ্রাতা প্রদত্ত ধন; ২. বিবাহকালে যজ্ঞাগ্নির সামনে প্রদত্ত ধন; ৩.স্বামী দ্বিতীয়বার বিয়ে করলে প্রথম পক্ষকে প্রদত্ত সান্ত্বনা-ধন; ৪. কন্যার জ্ঞাতি ও আত্মীয়বর্গ প্রদত্ত ধন; ৫. কন্যার জন্য পাত্রপক্ষের মূল্য হিসাবে প্রদত্ত ধন এবং ৬. বিবাহের পর বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত ধন।

Stridhan (Wife's Property)

In ancient Indian religious texts, a daughter's natural inheritance from her father's property is not recognized. However, in the Manusmriti, it is stated that if a person is childless and adopts a daughter as a putrika (adopted son), the daughter then inherits the father's property. Generally, the wealth a woman receives as a gift is entirely hers. This wealth is known as Stridhan. Stridhan usually consists of movable property that a woman receives from her father, mother, friends, and relatives, and after her death, her daughters inherit this property. According to Yajnavalkya, a husband has no claim over Stridhan, except in a few circumstances, such as during famine or for specific religious rituals.

The Manusmriti mentions six types of Stridhan:

  1. Adhyagni – This is given in the presence of the fire during marriage.
  2. Adhyavahnik – This is given when the daughter leaves for her husband's home.
  3. Preetidatta – This is given by relatives and friends out of affection.
  4. Bhratridatta – This is given by the brothers. According to Manu, at the time of marriage, brothers are to relinquish one-fourth of their inheritance for their sisters.
  5. Matridatta – This is given by the mother.
  6. Pitridatta – This is given by the father.

Kautilya mentions four types of Stridhan:

  1. Shulka – The bridegroom’s party provides the bride with jewelry and other items, which are valued as Shulka.
  2. Anvadhyeya – This is wealth received after marriage.
  3. Adhivedanik – This is wealth given to the woman when she moves to her husband's home.
  4. Bandhudatta – This is wealth given by friends.

Yajnavalkya, in a more concise manner, also discusses six types of Stridhan:

  1. Wealth is given by the father, mother, husband, and brother.
  2. Wealth is given during the marriage ceremony in front of the yagna fire.
  3. Consolation wealth is given by the husband to the first wife if he marries again.
  4. Wealth is given by the daughter's relatives and kin.
  5. The value of the bride is given by the bridegroom’s party.
  6. Wealth is obtained from various sources after marriage.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য | Arab Conquest of Sindh: Immediate Causes and Significance

আরবদের সিন্ধু অভিযানঃ প্রত্যক্ষ কারণ ও তাৎপর্য সপ্তম শতকের প্রথমার্ধে আরবদেশে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম আরবদের নতুন করে জীবনীশক্তির সঞ্চার করে । ইসলাম ক্রমশ: একটি ধর্ম থেকে রাজনৈতিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তারা আরবীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারতবর্ষের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। বাণিজ্যিক সূত্রে তারা নিয়মিত ভারতের উপকূল গুলিতে, বিশেষ করে মালাবার উপকূলে আসত। ভারতীয় ও চীনা পণ্য 'ধাও' নামক বিশেষ জাহাজে করে নিয়ে তারা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। 712 খ্রিস্টাব্দে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর সেনাপতি ও জামাতা মোহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু দেশে একটি সফল অভিযান করেন এবং সিন্ধুদেশ আরবীয় মুসলমানদের অধীনে চলে যায়। অভিযানের(প্রত্যক্ষ) কারণ ভারতবর্ষের প্রতি আরবদের দীর্ঘদিনের নজর ছিল। এর আগেও বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পাঠানো হয়েছিল। তবে এই(712 খৃ:) অভিযানের একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। জানা যায় যে সিংহলের রাজা ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে কয়েকটি জাহাজে করে উপঢৌকন পাঠাচ্ছিলেন কিন্তু পথে সিন্ধু দেশের জলদস্যুরা দেবল বন্দরে এ...

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ | Category of Archives

মহাফেজখানার শ্রেণীবিভাগ মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারগুলি সাধারণ জনতার জন্য নয় মূলত গবেষক, ঐতিহাসিক, আইনবিদ, চিত্র পরিচালক প্রভৃতি পেশার লোকজন তাদের গবেষণার কাজে লেখ্যাগারে নথি পত্র দেখতে পারেন।  লেখ্যাগার পরিচালনা ও সংরক্ষিত নথির ভিত্তিতে লেখ্যাগগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।   1. সরকারি লেখ্যাগার:- কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যে লেখ্যাগারগুলি গড়ে ওঠে। সেগুলিকে সরকারি লেখ্যাগার বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম সরকার পরিচালিত এক বা একাধিক লেখ্যাগার থাকে। যেমন, আমেরিকার Natonal Archive And records Administration (NARA)। ভারতবর্ষে র কেন্দ্রীয় লেখ্যাগার National Archive of India নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও আইনগত নথি, মানচিত্র, নক্সা,  পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে। 2. বানিজ্যিক লেখ্যাগার:-  এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের লেখ্যাগার বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান   মূলত তাদের সংস্থার ঐতিহাসিক এবং বানিজ্যিক নথি সংরক্ষিত রাখে। যেমন, ভারতের প্রথম বানিজ্যিক লেখ্যাগার হলো পুনার Tata Centrel Archive। 3. অলাভজনক লেখ্যাগ...

ষোড়শ শতকীয় ইউরোপে মূল্যবিপ্লব | Price Revolution

 ষোড়শ শতকের ইউরোপে মূল্য বিপ্লব   16 শতাব্দীতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মূল্য বিপ্লব। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য প্রায় 150 বছর সুস্থির থাকার পর ঊর্ধ্বমুখী হতে আরম্ভ করে, এবং 16 শতাব্দীর শেষে খাদ্যপণ্যের মূল্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপের অর্থনীতিতে এমন অভাবনীয় এবং সুদুরপ্রসারী ফলাফলসম্পন্ন ঘটনা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত। মূল্য বিপ্লবের কতগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা--    (১) কৃষিজ পণ্যের তুলনায় শিল্পজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ছিল কম, এবং খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। (২) ভূমি রাজস্ব সহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক, তোলা ইত্যাদির হার বৃদ্ধি এবং ফটকাবাজির আবির্ভাব। (৩) মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় মজুরির হার খুবই কম ছিল বলে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছিল। (৪) ভূমি বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হওয়া। (৫) গ্রামীণ বুর্জোয়াজি শ্রেণীর আবির্ভাব। ষোড়শ শতকের আগেও প্রাকৃতিক কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, তবে তা ছিল 2, 3 শতাংশের মতো, যা অস্বাভাবিক মনে হতো না। কিন্তু ষোল শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যে নিরবিচ্ছিন্ন মূল্যবৃদ্ধি হ...